বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি : ৮১ মিলিয়ন ডলারের অমীমাংসিত রহস্য

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি : ৮১ মিলিয়ন ডলারের অমীমাংসিত রহস্য

২০১৬ সালের ৭ই ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালক ব্যাংকের নবম তলায় থাকা একাউন্ট এবং বাজেটিং বিভাগের কক্ষে যায়। সেখানে থাকা প্রিন্টারটিতে গত কয়েক দিন ধরে সমস্যা হচ্ছে, সেটি ঠিক করতে তিনি সেখানে যান। প্রিন্টারটির কাজ ছিল ব্যাংকের রিয়েলটাইম লেনদেন প্রিন্ট করা। কিন্তু সেটি কাজ করছিল না। পরিচালকের কিছুক্ষণ চেষ্টা ফলে সেটি ঠিক হয়ে প্রিন্টের বাকি থাকা লেনদেনগুলো প্রিন্ট করতে শুরু করে। কিন্তু পরিচালক লক্ষ করলেন কিছু একটা সমস্যা হচ্ছে, প্রত্যাশার চেয়ে বেশী লেনদেন প্রিন্ট করছে এটি, তিনি প্রিন্ট কপি গুলো চ্যাক করতে লাগলেন সেখানে ৩৫ টি লেনদেন অতিরিক্ত প্রিন্ট হয়েছে, যেগুলো অত্যন্ত বিশাল অঙ্কের, যেগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব একাউন্ট থেকে বিভিন্ন দেশে টাকা পাঠানো হয়েছে বলে দেখানো হয়। সেগুলো ছিলো সুইফট নিরাপত্তার লজ্ঞন। সেখানে মোট ৯২৬ মিলিয়ন ডলার, যেগুলো ছিল বাংলাদেশের রিজার্ভের টাকা।

কর্মকর্তাদের মাজে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, তারা দ্রুত পেমেন্ট অর্ডার বন্ধের চেস্টা করে কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। মুহুর্তের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হয় প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার (৮৩৯০০০০০০০০ টাকা) । কিন্তু কীভাবে? টাকা কোথায় গিয়েছে? এরজন্য কারা দায়ী?

রংরূপের পক্ষ থেকে সাথে আছি,

_ইনকওয়েল

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি

ঘটনাটি ঘটেছে ২০১৬ সালে কিন্তু এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে আরো নয় মাস আগে থেকে। বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩,০০০ কিলোমিটার দূরে ফিলিপাইনের RCBC ব্যাংকের একটি শাখায় ৪ জন ব্যক্তি ৫০০ ডলার জমা দিয়ে একটি করে একাউন্ট খুলে পরবর্তী ৯ মাসে যেগুলোতে আর কোন লেনদেন হয়নি যেগুলো প্রায় পরিতেক্ত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি
Bank_officials_work_on_computers

আবার ফিরে আসি বাংলাদেশে, ২০১৬ সালে ঘটনার এক মাস আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের কাছে চাকরির আবেদন করে রাছেল নামের এক ব্যক্তি মেইল পাঠায় সেখানে একটি সিভি ফাইল ছিলো,কর্মকর্তাদের মধ্যে থেকে কেউ একজন সেটি ডাউনলোড করে। যার মধ্য দিয়ে হ্যাকারা বাংলাদেশ ব্যংকের সিস্টেমে অনুপ্রবেশ করে যা কর্মকর্তারা বুজতেও পারেনি। তারা ভাবতেও পারেনি ছোট ফাইল ডাউনলোড বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য এক মহা বিপদ ডেকে নিয়ে আসবে।

এক মাস পর, ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতি বার বাংলাদেশ কর্মকর্তারা সাপ্তহিক হিসাব শেষে ব্যংক বন্ধ করে চলে যায় আগামী দুইদিন ছুটি। সেই রাতেই হ্যাকারা শেষ বারের মতো ব্যাংক সিস্টেমে প্রবেশ করে। তারা বাংলাদেশ ব্যংকের সুইফট কোড ব্যবহার করে একটি ভুয়া অর্থ স্থানান্তর বার্তা তৈরি করে। তাদের রাস্তার শেষ কাটা ছিলো স্বয়ংক্রিয় প্রিন্টারটি যা ইতিমধ্যেই বন্ধ হয়ে পড়ে আছে সুতরাং তাদের পথ পরিষ্কার।

বাংলাদেশ সময় রাত ৮.৩০ মিনিট, হ্যাকার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের কাছে ৩৫ টি অনুরধে সর্বমোট ৯৫১ মিলিয়ন ডলার স্থানন্তরের অনুরোধ পাঠায়। স্থানান্তর গুলো ছিলো শ্রিলংকা এবং ফিলিপাইনে।

Money bank to bank

স্থানতের অনুরোধ গুলো সংক্রিয় ভাবে কার্যকর হতে শুরু করে কিন্তু ভাগ্যজনক ভাবে একটি একাউন্টের নাম ইরানী শিফিং কম্পানির নামের সাথে মিলে যায় যেটি মার্কিন নিশেধাজ্ঞার তালিকা ভুক্ত। তাই সেটি কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয় ম্যানুয়ালি পর্যালোচনার জন্য রিজার্ভ বিষয়টি পর্যালোচনা করতে গিয়ে এত গুলো অনুরধ দেখে তাদের সন্ধেহজাগে তাই তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে মেইল পাঠায় কোন ধরনের পতিক্রিয়া না পাওয়ায় তারা ৩০ টি অনুরোধের ৮৭০ মিলিয়ন ডলার স্থানান্তর আটকে দেয়। যা হ্যাকারা কখনো পাবেনা। কিন্তু বাকী ৫ টা? যেখানে ১০১ মিলিয়ন ডলার তার কি হলো?

স্বয়ংক্রিয় সিস্টেম সে অনুরোধগুলো গ্রহন করে আগেই টাকা পাঠিয়ে দেয়। যার একটি জার্মানির ডয়চে ব্যাংক হয়ে শ্রিলংকার প্যান এশিয়া ব্যাংকে শ্যালিকা ফাউন্ডেশনের একাউন্টে যায়া। যেখানে ছিলো ২০ মিলিয়ন ডলার। ছোট একটা ফাউন্ডেশনের এত টাকা অনুদান দেখে কর্মকর্তাদের সন্দেহ হয়। তাই তারা ডয়চে ব্যাংকের কাছে বিষয়টি জানতে চায়। বানান ভুল নিয়ে ডয়েচ ব্যাংকের সন্দেহ হয় তারা টাকাটা আবার রিজার্ভ ব্যাংকে পাঠিয়ে দেয়। ভাগ্যজোরে আবারো ২০ মিলিয়ন ডলার বেছে চায়। এখনো চারটি অনুরধের ৮১ মিলিয়ন বাকি সেগুলো কোথায়?

সেইগুলো একটি দেশে, শুধু দেশ নয় একই ব্যাংকের একই শাঁখায়। মনে আছে? শুরুতে বলেছিলাম ফিলিপাইনের RCBC ব্যংকের চারটি একাউন্ট খোলা হয়েছে। হ্যাঁ বাকি টাকা গুলো সেখানেই গিয়েছে। হ্যাকারা ইতিমধ্যে ক্যাসিনোতে ডিজিটাল প্যামেন্টের মাধ্যমে সেগুলোকে ক্যাশে রূপান্তর করা শুরু করে দিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা রবিবার ব্যাংকে এসে স্থানান্তর অনুরোধ দেখে রিজার্ভ ব্যংকের সাথে যোগাযোগের চেস্টা করে কিন্তু সেদিনতো নিউ ইয়রকে ছুটি চলেছে। অবশেষে সোমবার যখন রিজার্ভ ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয় তারা জানায় ৪ অর্ডারের ৮১ মিলিয়ন ফিলিপাইনের RCBC ব্যাংকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাৎক্ষনিক RCBC ব্যংকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সেখান থেকে কোন জবাব পাওয়া যায়নি কারন চীনা নববর্ষের জন্য সেখানে ছুটি চলছে।

A_hacker_looking_at_a_calendar

আপনি হয়তো একটা বিষয় লক্ষ করেছেন, প্রতি পদে বিড়ম্বনা যা হ্যাকারদের বাড়তি সুবিধা দেয়। হ্যাকাররা আক্রমন করে বৃহস্পতিবার রাতে, শুক্র, শনিবার বাংলাদেশ ব্যংক বন্ধ। রবিবার রিজার্ভ ব্যাংক, সোমাবার ফিলিপাইনে। এটি ছিলো তাদের দুর্দান্ত পরিকল্পনা।

পঞ্চম দিন, মঙ্গলবার RCBC ব্যংক যখন জানতে পারে স্থানান্তর গুলো অবৈধ ছিল ততক্ষনে একাউন্ট ব্যালেঞ্ছ শূন্য। ফিলিপাইনের ব্যংকের উন্নত গোপনীয়তা সিস্টেমের কারনে জানা যায়নি টাকা গুলো কোথা থেকে ক্যাশ করা হয়েছে। তবে দুই জন চীনা নাগরিককে একাউন্ট তৈরর জন্য দায়ী করা হয়। আশা করা হয়েছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে হয়তো আসল অপরাধীর সম্পর্কে জানা যাবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে যতক্ষনে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ সেখানে পৌছে ততক্ষনে তারা চীনের মাকাও শহরে পাড়ি যেখনে তাদের খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। ভাগ্যক্রমে ৮৯০ মিলিয়ন ডলার বেছে গেলেও দুর্ভাগ্যবশত ৮১ মিলিয়ন ডলার হারাতে হয়।

হ্যাকাররা সর্বোচ্চ চেস্টা করে ব্যংক সিস্টেম থেকে তাদের সব প্রমান মুছে দিতে কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়। সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষকগন ম্যালওয়ার অনুসন্ধানে জানতে পারে একই ম্যালওয়ার ব্যবহার করে এই হ্যকার গ্রুপ বিশ্বের আরো বহু ব্যংকে সাইবার হামলা করে এবং সিস্টেমটিতে কোরিয়ান ভাষার উপস্থিতি ছিল এবং সে দেশের আইপি পাওয়া গিয়েছে। এটা স্পস্ট যে, এটা কোরিয়ান হ্যকার গ্রুপের কাজ যারা বিশ্বব্যাপী লাজারাস নামে পরিচিত।

আমদের লেখা আপনার কেমন লাগলো মন্তব্য ঘরে তা জানাতে ভুলবেন না, আরো দারুন সব আর্টিকেল পড়তে এখানে ক্লিক করুন

akram

My name is Akram Hossain, I try to present you some interesting and informative articles on behalf of Rangrup.

This Post Has 3 Comments

  1. Aderiener

    Taken together, our studies reveal differential, partially counterbalancing actions of insulin in the CNS, a catabolic function via control of food intake, and an anabolic function via indirect stimulation of lipogenesis can priligy cure pe

Comments are closed.